তৃতীয় পরিচ্ছেদ - দ্বিতীয় দর্শন
১৮৮২ মার্চ
দ্বিতীয় দর্শন
অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্ ৷ তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ৷৷
গুরুশিষ্য-সংবাদ
দ্বিতীয় দর্শন সকাল বেলা, আটটার সময়। ঠাকুর তখন কামাতে যাচ্ছেন। এখনও একটু শীত আছে। তাই তাঁহার গায়ে মোলেস্কিনের র্যাপার। র্যাপারের কিনারা শালু দিয়ে মোড়া। মাস্টারকে দেখিয়া বলিলেন, তুমি এসেছ? আচ্ছা, এখানে বস।
এ-কথা দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় হইতেছিল। নাপিত উপস্থিত। সেই বারান্দায় ঠাকুর কামাইতে বসিলেন ও মাঝে মাঝে মাস্টারের সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। গায়ে ওইরূপ র্যাপার, পায়ে চটি জুতা, সহাস্যবদন। কথা কহিবার সময় কেবল একটু তোতলা।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — হ্যাঁগা, তোমার বাড়ি কোথায়?
মাস্টার — আজ্ঞা, কলিকাতায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — এখানে কোথায় এসেছ?
মাস্টার — এখানে বরাহনগরে বড়দিদির বাড়ি আসিয়াছি। ঈশান কবিরাজের বাটী।
শ্রীরামকৃষ্ণ — ওহ্ ঈশানের বাড়ি!
শ্রীকেশবচন্দ্র সেন ও মার কাছে ঠাকুরের ক্রন্দন
শ্রীরামকৃষ্ণ — হ্যাঁগা, কেশব কেমন আছে? বড় অসুখ হয়েছিল।
মাস্টার — আমিও শুনেছিলাম বটে, এখন বোধ হয় ভাল আছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি আবার কেশবের জন্য মার কাছে ডাব-চিনি মেনেছিলুম। শেষরাত্রে ঘুম ভেঙে যেত, আর মার কাছে কাঁদতুম, বলতুম, মা, কেশবের অসুখ ভাল করে দাও; কেশব না থাকলে আমি কলকাতায় গেলে কার সঙ্গে কথা কব? তাই ডাব-চিনি মেনেছিলুম।
“হ্যাঁগা, কুক্ সাহেব নাকি একজন এসেছে? সে নাকি লেকচার দিচ্ছে? আমাকে কেশব জাহাজে তুলে নিয়ে গিছিল। কুক্ সাহেবও ছিল।”
মাস্টার — আজ্ঞা, এইরকম শুনেছিলুম বটে, কিন্তু আমি তাঁর লেকচার শুনি নাই। আমি তাঁর বিষয় বিশেষ জানি না।
[গৃহস্থ ও পিতার কর্তব্য ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — প্রতাপের ভাই এসেছিল। এখানে কয়দিন ছিল। কাজকর্ম নাই। বলে, আমি এখানে থাকব। শুনলাম, মাগছেলে সব শ্বশুরবাড়িতে রেখেছে। অনেকগুলি ছেলেপিলে। আমি বকলুম, দেখ দেখি ছেলেপিলে হয়েছে; তাদের কি আবার ও-পাড়ার লোক এসে খাওয়াবে-দাওয়াবে, মানুষ করবে? লজ্জা করে না যে, মাগছেলেদের আর একজন খাওয়াচ্ছে, আর তাদের শ্বশুরবাড়ি ফেলে রেখেছে। অনেক বকলুম, আর কর্মকাজ খুঁজে নিতে বললুম। তবে এখান থেকে যেতে চায়।
Last updated